রঘুনাথ দাস গোস্বামী

 রঘুনাথ এর ভজন যেনো পাষাণের রেখা ! শ্রী রঘুনাথ দাস গোস্বামী, 

       গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু র নিত্য সিদ্ধ পর্ষদ ছয় গোস্বামীর মধ্যে এক গোস্বামী ছিলেন, এনি বাংলার আদিসপ্তোগ্রা ম এর জমিদার গোবর্ধন দাসের একমাত্র পুত্র ! হিরন্ন দাস বড় ভাই ও গোবর্ধন দাস ছোটো ভাই তার সংসারে কোনো মন নেই দেখে তার পিতা তাকে লৌহ কারাগারে বন্ধন করে রেখেছেন ! রঘুনাথ এর মা তার বাবা কে বললেন দেখ রঘুনাথ কে ওই ভাবে কষ্ট দিয়ে কি লাভ, স্বর্গের অপ্সরী সমান যার স্ত্রী আর  দেবরাজ ইন্দ্র তুল্য যার ধন জীবের প্রধান বন্ধন হচ্ছে এই কামিনী আর কাঞ্চন তা দিয়ে যখন তার মন বাঁধতে পারনি তখন লোহার শেখলে কি তাকে বাধা যায় । ওকে ছেড়ে দাও ও চৈতন্যের দাস চৈতন্যের কাছেই যাক, আচ্ছা তাই হোক এই বলে বাবা তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিলেন পিতা ও মাতা কে প্রণাম করে রঘুনাথ তার স্ত্রী  রত্নাবতি নিকটে বিদায় চাইলেন, স্ত্রী রত্নাবতি  বলেন  আমি তো আর পারবোনা তোমার মতন তোমার গৌরের কাছে যেতে ।  তুমি আমার হয়ে তার কাছে পার্থনা করো আমি যেনো  ঘরে বসে তোমার কৃষ্ণ কে পাই, নয়নের জলে বিদায়  দিলেন । রঘুনাথ ছুটতে ছুটতে চললো শ্রী ক্ষেত্র পুরীর উদ্দেশ্যে এসে পৌঁছলেন তিনি পুরীতে গম্ভিরায় এক ভক্ত বললো  প্রভু রঘুনাথ এসছে  প্রভু বললেন যাও ওকে এখানে নিয়ে এসো । রঘুনাথ এসে প্রভু কে প্রণাম করলেন  প্রভু বলেন রঘুনাথ এতদিনে কৃষ্ণ  তোমার সংসার বন্ধন মোচন করলেন, আমার কাছে  থেকে ভজন করো তুমি । অকিঞ্চন বৈষ্ণব  কিছু চায় না জগন্নাথ এর দরজায় দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করে রঘুনাথ । একদিন মহাপ্রভু এক ভক্তকে জিজ্ঞাসা করলেন রঘুনাথ কি করে ভোজন করে কথায় থাকে বলো ? ভক্ত বলে প্রভু রঘুনাথ জগন্নাথের সিংহ দ্বারে দাড়িয়ে থাকে কেউ দিলে তবেই সে খায় ! প্রভু বললেন কি, এত বেশ্যা বিত্তি কোনো গ্রাহক এলো  তাকে কিছু দিলো, এটা ঠিক নয় । রঘুনাথ শুনলেন সেই কথা কি প্রভু এই কথা বলেছেন ! সেদিন থেকেই রঘুনাথ মন্দিরের এক নালির কাছে বসে যে সব পাখাল প্রসাদ পচে গলে দুর্গন্ধ বের হয়ে গেছে ও তা নালি দিয়ে পড়ছে, রঘুনাথ সেই প্রসাদ জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে তবে সে খায়।

  একদিন প্রভু ওইদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন দেখলেন রঘুনাথ দাস সেই প্রসাদ ধুয়ে খাচ্ছে প্রভু বলেন রঘুনাথ তুমি একাই এই অমৃত খাও কই তুমি আমাকে তো দাওনা ।  রঘুনাথ বলে না প্রভু এই দুর্গন্ধ যুক্ত প্রসাদ তুমি খেতে পারবেনা, প্রভু বলেন কেনো পারবোনা তুমি যদি পারো তবে আমি কেনো পারবো না ! দাও দাও বলে প্রভু তার হাত থেকে প্রসাদ কেরে খান আর বলেন আহা রঘুনাথ তুমি প্রতিদিন অমৃত ভোজন করে থাকো, তোমার ত্যাগের সীমা নেই । রঘুনাথ তুমি বৃন্দাবনে গিয়ে ভজন  করো তোমার অভিষ্ঠো সিদ্ধি হবে,  সেই থেকে রঘুনাথ দাস শ্রী বৃন্দাবনে কলিয়াদোহে  সনাতন দাস গোস্বামীর নিকটে এসে  দীক্ষা প্রাপ্ত হলেন। সনাতন পাদ বললেন রঘুনাথ  তুমি  রাধা কুন্ডে গিয়ে  ভজন করো, গুরুর আদেশে  রধাকুন্ড এ এসে ভজন করতে লাগলেন রঘুনাথ ।  খোলা আকাশের নিচে  একটি বৃক্ষ তলে বাস করেন তিনি শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা  সব  সহ্য করেন তিনি,  একদিন  সনাতন গোস্বামী মনে ভাবলেন  যাই একবার দেখে আসি আমার রঘুনাথ কেমন  আছে ।  একদিন সনাতন পাদ এলেন তার  রঘুকে  দেখতে, তিনি দুর থেকে দাড়িয়ে দেখছেন যে  মধ্যন্নকাল দুপুরে প্রখর রোদের  তেজ গাছ তলায় বসে রঘুনাথ নয়ন মুদে ভজন করছে  আর চোখের  জলে তার বুক ভেসে  প্লাবিত  হচ্ছে  এবং সেই  কষ্ট দেখে আর থাকতে পারলেন না কুণ্ডেশ্বরী  শ্রীমতী রাধারানী ।  আড়ালে পেছনে দাড়িয়ে  কিশোরী জী তার পরনের কাপড়ে র  আঁচল খানা রঘুনাথ এর মাথায়  মেলে ধরে ছায়া দিচ্ছেন ।  রাধারাণীর কোমল চাঁদ বদন আরক্তিম হইয়াছে এবং তার কোমল বদন দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরছে,  আর তার পরনের ঘাগ্রি ও কাচুলি ঘর্ম বাড়িতে  একেবারে  সিক্ত  হচ্ছে  না জানি  কতই কষ্ট  হচ্ছে শ্রীমতি রাধারাণীর,  ভজন পূর্ণ হলে  কিশোরী জী অন্তর্ধান করলেন ।   গুরুদেব কে দর্শন করে তিনি প্রণাম করলেন, সনাতন পাদ বললেন রঘুনাথ  তোমার জন্য তোমার  উপাস্য রাধারানী নিত্য কত কষ্ট  নিজের মাথা পেতে নিয়ে সহ্য করেন তুমি জানো রঘু ?  না গুরুদেব আমি তার কিছুই জানিনা,  সব কিশোরী জির বৃত্তান্ত  খুলে বললেন তিনি ।  রঘুনাথ  তুমি এই ভাবে ইস্টদেব কে কষ্ট দিলে তোমার যে ভজন অপরাধ হবে,  তুমি একটা পাতার ভজন কুঠির তৈরি করে  তার ভেতর বসে তুমি ভজন  করো  আমার আদেশ তাতে  তোমার কোনো অপরাধ হবে না আমি বলছি রঘু  ।  গুরুর আদেশে মাথা পেতে নিলেল রঘুনাথ ।  রঘুনাথ কে আশীর্বাদ করে  প্রস্থান করলেন সনাতন গোস্বামী !  হে রাধে তুমি এলে আমায় দর্শন দিলে না আমি কি আর তোমার দর্শন পাবনা  এই বলে কাঁদতে লাগলেন তিনি,  দেখলেন  শতকোটি চাঁদের জ্যোতি নিয়ে স্বামিনি রাধারানী দন্ডায়মান তার  সম্মুখে,  কি অপূর্ব সেরূপ  দর্শন যেনো মনে হলো অনন্ত  চক্ষু থাকলে সেই  রূপ দর্শনে কিঞ্চিৎ সহায় হতো  তিনি বললেন  রঘুনাথ  তুমি সফলকাম হোয়েছো আবার যথা সময়ে তুমি  আমার দর্শন পাবে এই বলে  রাধারানী অন্তর্ধান হলেন ।  কি আমি কোনো স্বপ্ন দেখলাম নাতো ! না এখনও রধাপ্রেমে আমার সর্ব অঙ্গ  প্লাবিত হচ্ছে জয় শ্রী রাধে অপার করুণাময়ী রাধে ।  আমায় দয়া করো রাধে ।  রাধে রাধে বলে রধাকুণ্ড তীরে বসে রঘুনাথ দাস কাঁদে ।  কি তীব্র ত্যাগ ও বৈরাগ্য  রঘুনাথ এর ভজন যেনো পাষাণের লেখা,  ছয় গোস্বামীর ত্যাগ ও আদর্শ  আজ সকল ভক্ত বৈষ্ণবের পালনীয় আদর্শ ও শিক্ষা ।  কিন্তু বর্তমান অনেক বৈষ্ণবরা  সেই আদর্শ কে  মানতে রাজি নন,  আজকাল ত্যাগীদের ত্যাগ দেখলে অবাক হতে হয়  কি ভোগের প্রাচুর্য্য ও  ভোগ বিলাস এবং তারা নিজেরা কত ত্যাগ স্বীকার করে এই জগৎ কে শিক্ষা দিয়েছেন ।  তাই শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু বললেন  "আপনি আচরী ধর্ম জীব কে শেখায়। আচরণ বিনা ধর্ম  শেখানো না যায় ।  আগে নিজে  ত্যাগ করে পরে ত্যাগের উপদেশ দাও, না হলে সেটা কেউ গ্রহণ করবেনা যেনো ।  তাদের লজ্জা করা উচিৎ  এই কি শ্রী মন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর শিক্ষা ।  মহাপ্রভু রঘুনাথ কে বলেছিলেন মর্কোট বৈরাগ্য না কারো লোক দেখাইয়া,  যথা যোগ্য বিষয় ভোগ কর অনাসক্ত হইয়া ।  ভজন পথে ভন্ডামি করার থেকে তুমি সংসারে থেকে বিষয় ভোগ করা অনেক উপায়ে  শ্রেয় তাতে কোনো অপরাধ নেই , কিন্তু ত্যাগের পথে ভন্ডামি প্রভু কখনোই সহ্য  করতে পারেন না সাবধান ।   আমি পাষন্ড কে উদ্ধার করি কিন্তু আমি ভন্ড কে কোনো কলেই উদ্ধার করি না । ( চৈতন্য চরিতামৃত ) 

     

     ক্রমশঃ~  শ্রী কৃষ্ণ দাস সঞ্জয় শাস্ত্রী, নবদ্বীপ ধাম  ভালো লাগলে জানাবেন ।  ধন্যবাদ সবাইকে ।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

sanjaykumar goswam104@gmail.com

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Ramayon Ki Mhima