চাপাল গোপাল উদ্ধার নবদ্বীপে ~

 পাষন্ড গোপাল উদ্ধার~

 শ্রী ধাম নবদ্বীপ অদ্যপিয় সেই লীলা করে গোড়া রায় কোনো কোনো ভাগ্যবান দেখিবার এ পায়। ১৪০৭ শকাব্দ প্রায় ৫৩৫ বছর পূর্বে ফাল্গুনী দোল পূর্ণিমায় সেদিন ছিল পূর্ণ চন্দন গ্রহণ,  আবির্ভূত হয়েছেন কলিযুগের যুগ পাবন অবতার স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণের অবতার শ্রী মন মহাপ্রভু গৌরাঙ্গ সুন্দর ।
      পিতা শ্রী জগন্নাথ মিশ্র আর মাতা শচী রানী দেবী, বাল্যকাল থেকে অনেক লীলা খেলা করে গৌর ভগবান ।  নিত্য নবদ্বীপের শ্রীবাস অঙ্গনে উদয় অস্ত চলে কৃষ্ণ নাম সংকীর্তন, প্রাতঃকালে প্রভু বাড়ি যান ।

      নিত্যদিনের মতন আজও গৌর সুন্দর শ্রী বাস অঙ্গনে সারা রাত ধরে কীর্তন করছেন রাত তখন তিনটে নাগাদ হবে, যারা তৎকালীন সময় মহাপ্রভু কে সহ্য করতে পারতেন না, কিন্তু তারা ছিলেন সব বিখ্যাত 
পণ্ডিত সেই পন্ডিতগণ সারারাত বসে রাস্তার ধারে নিমাইয়ের বিরুদ্ধে জটলা করে। দেখুন
বিদ্যা লঙ্কা পণ্ডিত, ন্যায় তীর্থ, আগম্বাগিশ ন্যায় রত্ন, বিদ্যা ভূষণ মহাশয় নিমাই সবাইকে
বলে কেবল হরি নাম করো এই কলি যুগে নাম ছাড়া অন্য কোন গতি নাই, কিন্তু আমাদের পূজো পাঠ না হলে আমাদের সংসার আর চলে না। এমন কি কেউ নেই যে
নিমাইয়দের এই ঢিট করে নবদ্বীপ ছাড়া করতে পারে ? আমরা এখন কি করবো বলুন
আপনারা ! রাত তখন তিনটে তারা শুনতে পেলো কে একজন মা কালীর গান গেয়ে আসছে, "এবার কালী তোমায় খাবো তোমার
মুন্ডুমালা কেরে নিয়ে মটর ভাজা করে খাবো"
আরে এ যে আমাদের তান্ত্রিক সাধক গোপাল
দা যে, গোপাল আপনারা এত রাতে এখানে কি করছেন ? আমি শ্বশান থেকে আসছি, কিন্তু গোপাল দা নিমাই কি বলছে জানেন 
আপনার মায়ের নাম আর কেউ করছে না ।
      কি ? ক্রোধান্বিত হল গোপাল ব্যানার্জী এত বড় কথা আজ থেকেই নিমাইয়ের নাম
করা আমি বন্ধ করে দেবো, আপনারা একটু
আমাকে সাহায্য করুন । গোপাল তাদের কে
নিয়ে একটা ছাগলের মাথা কেটে দরজার করায় ঝুলিয়ে দিলেন, ছাগ রুধির কলাপাতায় রাখলেন, ও একটা সূরা মদের ভান্ড ভেঙ্গে ছড়িয়ে দিলেন তার উপরে। আর
বললো দেখবে যখন ওরা সকালে দরজা খুলে বাড়ি যাবে তখন বুঝবে তারা ব্যাপার ও
বাপ আছে, যান আপনেরা নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ি
যান। এই অপকর্ম করে গোপাল বাড়ি ফিরে
গেলো ।
        অন্তরে জানলেন অন্তর্যামী শ্রী ভগবান গৌর সুন্দর ডেকে বললেন শ্রীবাস পণ্ডিত যাও দরজাটা খুলে দাও আমি বাড়ি যাবো। শ্রীবাস পণ্ডিত প্রভু এখনতো ভোর হয় নি একটু পরে যাও, না শ্রীবাস আমি এখনই বাড়ি
যাবো । প্রভুর আদেশে শ্রীবাস পণ্ডিত দরজা খুলে দেখলেন যে একি এসব কে করলো ছি ছি ছি প্রভু যাবেন কি করে ! শ্রীবাস তখন হরিজন দিয়ে সব পরিষ্কার করলেন, আর আশীর্বাদ করে বললেন যে তুই যেই হও তুই
যে হাত দিয়ে এই পাপ কাজ করেছিস আমি
যেনো তোকে দেখতে পাই তুই সেই হাত দিয়ে
মহাপ্রভুর চরণ ধরে ক্ষমা চাইতে,  অভিশাপ দিলেন না বৈষ্ণব শাপ দেন না কিন্তু শ্রীবাস এর এই আশীর্বাদ অভিশাপের থেকে অনেক বেশি হলো। শ্রীবাস তোমার হলো হ্যাঁ যাই প্রভু
শ্রীবাস দরজা খুলে তুমি কি দেখলে তা তো আমাকে বললে না, ওই পাষন্ড আমার চরণ ধরে নয় তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইবে শ্রীবাস আমায় ক্ষমা কর বলে  । প্রভু বাড়ি চলে গেলেন !
             ঠিক তিনদিন পরে গোপালের সর্ব অঙ্গে ভীষণ যন্ত্রণা করতে শুরু করলো, সে তার স্ত্রীকে ডাকলেন নিস্তারিনি দেখো তো আমার গায়ে এসব কি হলো ? স্ত্রী বললো সেকি ব্রাম্ভনের শরীরে কুষ্ঠ ব্যাধি এযে মহা 
অপরাধের লক্ষণ, গোপালের ধীরে ধীরে সর্ব
অঙ্গ গোলে পচে যাচ্ছে তার জায়গা হলো গোয়াল ঘরে, কয়দিন আর গোপালের কোনো
সারা শব্দ নেই নিস্তারিনী ভাবলো ও বোধ হয়
আর বেঁচে নেই। তখন ডোম পাড়ায় গিয়ে কালু ভলু ধলু ডোম কে সোনা ও টাকা দিয়ে
ডমদের কাছে বলে আমাদের বাড়ির চাকরটা
মারা গেছে তোরা ওকে ফেলে দিয়ে আয় বাবা। আচ্ছা মা ঠাকরুন এই বলে তারা গোপালের মুখে অস্ফুট স্বরে কথা শুনলো যে
তোরা কে বাবা। আমি তোদের বাবা ঠাকুর আমি মরি নাই, মা ঠাকরুন যে বললেন বাড়ির চাকরটা মারা গেছে । কি আমাকে আমার স্ত্রী 
বাড়ির চাকর বলে বেড় করে দিল, আজ বাড়ির কর্তা হয়ে আমি বাড়ির চাকর হলাম !
একদিন শুধি মন্ডলী আমাদের সবাইকেই বাড়ির চাকর হতে হবে জেনে রাখুন সাবধান 
বাবা ঠাকুর আপনি এই শ্রীবাস অঙ্গন ঘটে থাকুন বৈষ্ণবের কৃপা হবে, আমরা যাই এই
বলে তারা চলে গেলো।  

          ভোরে গঙ্গা স্বানে এলেন এক বৈষ্ণব মহাত্মা মুখে তার সুমধুর ভজন !
      " ভজ রাধা কৃষ্ণ গোপাল কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলো মুখে !
      হরি দিনও বন্ধু চিরো দিনও বন্ধু  জীবের চিরো সুখে দুঃখে ! "
       গোপাল অস্ফুট স্বরে ডাকল বৈষ্ণব বাবা
 এইদিকে আসবেন, বৈষ্ণব কাছে এলেন তুই
কে রে? তোকে তো খুব চেনা চেনা লাগছে ।
আরে তুই নবদ্বীপের গোপাল না তোর এই দশা কি করে হলো, তুই নিশ্চয় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর চরণে কোনো অপরাধ করেছিস ।
কে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু, ওরে নিমাই রে গোপাল
নিমু মানে শচী দির ছেলে আমি ওর মাকে দিদি বলি সম্বন্ধে নিমাই আমার ভাগ্নে হয় ।
ওরে গোপাল তুই তার উপরের রূপটা দেখেছিস কিন্তু ভিতরে তিনি সাক্ষাৎ নারায়ণ
তুই তাকে ডাক এই বলে বৈষ্ণব চলে গেলেন।

      বৈষ্ণব এর কথায় বিশ্বাস করে এমন ডাক
দিলো গোপাল এসো হে প্রভু নারায়ণ, গোপালের ডাকে থাকতে না পেরে ছুটে এলেন প্রভু। কি রে তুই আমায় ডাকছিস কেনো গোপাল ? গোপাল বলে প্রভু তুমি আমায় ক্ষমা করো, প্রভু বলেন কোটি জন্ম
তোকে আমি কুষ্ঠ ব্যাধি ভোগাইবো বৈষ্ণব অপরাধী তুই তোকে আমি  কভু না ক্ষমিবো ।
এই বলে চলে গেলেন প্রভু ! 
     গোপাল গিয়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দিল কিন্তু বৈষ্ণব অপরাধী বলে গঙ্গা সরে গেলো, গোপাল অতি কষ্টে কাশী ধামে গিয়ে  হত্তা দিলো রাতে লাল চক্ষু হাতে ত্রিশূল নিয়ে ক্রোধে বলেন বৈষ্ণব বিদ্বেষী আমার কাশিধাম ছার, তোর পর্শে আমার কাশী অপবিত্র হলো। গোপাল আবার নবদ্বীপে
ফিরে এলো এসে শুনলো গৌর সুন্দর সন্ন্যাস
নিয়ে নবদ্বীপ ত্যাগ করে পুরি ধামে চলে গেলেন ।  কয়েকদিন পর দেখলো গোপাল সবাই ছুটতে ছুটতে কোথায় যাচ্ছে, গোপাল জিজ্ঞাসা করলো তোমরা কোথায় যাচ্ছ ভাই ।
সবাই বলে আমরা কুলিয়ার পাটে যাচ্ছি, সেখানে আমাদের গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু এসেছেন গো ! গোপাল বলে আমিও যাবো তোমাদের সঙ্গে আচ্ছা  তুমিও চলো আমাদের সঙ্গে ।

       গোপাল গিয়ে দেখলো প্রভু নাই সবাই বললো প্রভু গঙ্গায় গেছেন, একটু পরে প্রভু আসছেন ভক্তরা আসছেন নাম করতে করতে
গোপাল চরণ দুটি জড়িয়ে ধরলো প্রভু তুমি আমাকে ক্ষমা করো । তুই কে রে পা ছার বলছি, প্রভু আমি সেই হতভাগ্য গোপাল ! প্রভু
মাতৃ স্নেহে বলেন তুই এখনও মরিস নি বেঁচে আছিস, তোকে তো আমি ক্ষমা করতে পারবো না, তুই অপরাধ করেছিস শ্রীবাস এর
কাছে ওর কাছে ক্ষমা চা শ্রীবাস যদি ক্ষমা করে তবে আমি ক্ষমা করতে পারি । গোপাল
শ্রীবাস এর চরণ ধরে ক্ষমা চাইলেন  শ্রীবাস বলে প্রভু এ আবার কে, তোমাকে ছেড়ে আমার কাছে এসে ক্ষমা চাচ্ছে কেনো ! প্রভু
বলেন শ্রীবাস তোমার মনে আছে এই সেই পাষন্ড গোপাল আমি বলেছিলাম না তোমার
পা ধরে ক্ষমা ভিক্ষা করাবো তাই করলাম আমি । শ্রীবাস বলে প্রভু এত কষ্ট ওর আমার
জন্মর্জ্জিত পূর্ণ আমি গোপালকে দিলাম ও
গোপালকে আমি ক্ষমা করলাম । প্রভু বলেন
আয়েরে গোপাল তোকে হিয়ায় ধরি শ্রীবাস তোকে ক্ষমা করেছে আর কি তোর বৈষ্ণব অপরাধ আছে, মহাপ্রভু গোপালকে  বুকে জড়িয়ে ধরলো আর কোথায় তার কুষ্ঠ ব্যাধি
গোপালের সোনার কান্তি হলো । যা গোপাল
গঙ্গায় স্বান করে এলে প্রভু তাকে দীক্ষা দিয়ে
বলেন প্রতিদিন লক্ষ নাম করিবি সমাপন ।
চাপাল গোপাল কে প্রভু উদ্ধার করলেন, এটা
তার পতিত পাবন অবতার লীলা গৌর হরির ।
তার পর স্ত্রী নিস্তারিনি এলো তাকেও প্রভু দীক্ষা দিদেল, তোমরা যুগল হয়ে যুগল ভজন
করো গোপাল মুখে বলো হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে !! কলিযুগে নাম বিনা আর নাহি
ধর্ম, চারিযুগ সার নাম এই শাস্ত্র মর্ম ।

        জয় শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু র জয় ! জয় ভক্ত বৈষ্ণবের জয়, জয় হরি নামের জয় ।
            ক্রমশঃ ~
              শ্রী কৃষ্ণ দাস সঞ্জয় শাস্ত্রী, নবদ্বীপ ধাম । এটাই গোপালের উদ্ধার কাহিনী চৈতন্য
চরিটামৃত থেকে বর্ণিত ।
সঙ্গে থাকুন আর ও অনেক ভালো ভালো কাহিনী পাবেন । পড়ার জন্য ধন্যবাদ । ।
     

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

sanjaykumar goswam104@gmail.com

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি