কুলো কুণ্ডলিনী মহাশক্তি সাধন তত্ত্ব

 ক্ষ্যাপা বাবা  আপন মনে  রাম নাম  করছে,  এমন  সময় রামদাস  এসে বললো ও ক্ষাপা বাবা  কুলোকুণ্ডলিনি র  সাধন তত্ব  কি গো ?  ক্ষ্যাপা  বাবা একজন  সিদ্ধ মহাপুরুষ একটি ছোট তাল পাতার  কুঠির করে  শ্রী ভগবান কে  নিয়ে থাকেন । ক্ষ্যাপা বলে বলো কি গো !    ইয়ে  যে  খুব গভীর তত্ব  সাধারণের বোধ গম্য  হয় না ,  তুমি কি বুঝতে পারবে। হ্যাঁ আমি ঠিক পারবো  আমি সাধনার  মধ্যেই  আছি ।  তুমি বলো !  তবে শোনো  এ যে অনেক  ব্যাপার,  প্রত্যেক মানব দেহে  ষট চক্র আর  সপ্ত পদ্ম  সর্ব নিম্নে গুহ্যদ্বার এ মূলাধার চক্র আছে , লিঙ্গে স্বধিষ্ঠা ন  চক্র আছে ।   নাভিতে মনিপুর  চক্র আছে,  হৃদয়ে আছে  অনাহত চক্র  সেখানে শ্রী কৃষ্ণের বাঁশি সদাই বাজে ।  ভ্রু যুগলে  বাস করেন   আজ্ঞা চক্র  এনি  আজ্ঞা দেন,   এবং  সর্বোপরি অবস্থান করছেন  মস্তকে  সহস্বার চক্র এটা  গলোকধাম  এখানে  সৎ গুরু ভগবান শ্রী রাধা কৃষ্ণ  সর্বদা  বিরাজ  করছে ।   পদ্ম  বিষয়ে আমি পরে বলবো,  হ্যাঁ  মূলাধার চক্র এ  গুহ্যদ্বার হতে  দু অঙ্গুলি  উপরে  তার এক শতকোটি  সূর্য্য সমপ্রভা  আত্ম স্বরূপ  বান লিংগ  শিব  আছেন ও  তাকে  আড়াই  প্যাচ এ  বেষ্টন  করে  নিজের মুখে  নিজ লেজ পুচ্ছু প্রবেশ  করিয়ে  সুষনম্মা  দ্বার  বন্ধ করে  অনাদিকাল ধরে  নিদ্রিত  হয়ে  আছে  বিদ্যুত বর্ণ  ও সর্পাকারে  কুলো কুণ্ডলিনী শক্তি  ।  গায়ে  তিনটি বস্ত্র  জড়িয়ে  আছে,  স্থূল, সূক্ষ্ম  ও  কারণ,  তুমি  এই  তিনটে কে  উপেক্ষা  করে  মহাকরণ  পরমাত্মা  শ্রী ভগবান কে  দেখো  রামদাস  ।  

          নাসিকার  দক্ষিণ  দিকে  যে  নিশ্বাস  চলে  তাকে  বলা হয়  ইড়া  নারী ,  আর  নসিকার  বাম  দিকে   যে   নিঃশ্বাস  চলে   তাকে বলা হয়  পিঙ্গলা  নারী   ।    ও  মানব  দেহে  একটা  প্রধান  অতি উজ্জ্বল  নারী   আছে  তার নাম  হলো  সুশনম্মা চ  নারী ,  এটি  পিঠে র   সিরদ্বারা  দিয়ে  চলে ।   কিন্তু  সেটির  দ্বার  বন্ধ  থাকার  জন্য  সে  বইতে  পারেনা ,  এর দ্বার   বন্ধ  করে  ঘুমাচ্ছে  কুণ্ডলিনী  শক্তি ।   আর একে  জাগানোর  জন্যই  সাধন ও ভজন করতে হয়  এবং  সেই  শক্তি  জাগরিত  হলে  সাধকের  সর্ব সিদ্ধি লাভ  হয়ে  থাকে তার  সকল   প্রকার মনের কামনা  পূর্ণ  হয়  ।   সাধকের  নাম ও মন্ত্র  দুই  সিদ্ধ   হয়ে  থাকে ।   মা  জেগে উঠে  সাধকের  সকল   মায়ার সংসার  বন্ধন থেকে মুক্ত করে  দেন,    তার  মায়ার  অষ্ট পাশ  নষ্ট  করে দেয়  বেটি  ।   হট যোগ,  রাজ যোগ,  করলে বা  গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে  ও  ইষ্ট মন্ত্র জপ করলে  এবং হরে কৃষ্ণ হরে রাম নাম  করলেও  জাগে  বেটি,  মা একবার  জাগলেই   কেল্লা ফতে  ।  সকল  যন্ত্রণার  অবসান  ঘটে  রামদাস !   ধ্যান  ধারণা ও  সমাধির  ভিতর  দিয়ে  জাগরিত  হয় কুণ্ডলিনী মহা শক্তি ।   সমাধি  আরম্ভ  হলে  কুম্ভ্যক্  হতে  থাকে  তখন  নাসীকার   ইরা  ও  পিঙ্গলার  কাজ  বন্ধ  হয়ে যায়,  আর  সেই সময়  সুসন্মা  দিয়ে স্বাস  বইতে  থাকে  সাধক  ধ্যান দ্বারায়  শ্রী ভগবান এর  নাম  জপ  করতে  থাকে সেই  নাম মন্ত্রের  শক্তি  সীরদ্বারা  ভিতর  সুসন্মার  স্বাসের  সঙ্গে  গিয়ে   কুলো কুণ্ডলিনী  শক্তি কে  নাম  শোনাতে  শোনাতে  ধাক্কা  মারতে  থাকেন,  এই ভাবে   দীর্ঘদিন  নাম  জপ   শুনতে  শুনতে  জেগে  উঠেন  মা !  তিনি  আর  থাকতে  পারেন  না   তাকে  বৈষ্ণব বাবারা বলেন  রাধারানী  আর  শাক্ত  বাবারা  বলেন  মা  দক্ষিণা  কালি  ।  এই  সব  যোগ সাধনার  দ্বারায়  হয়,  না  হলে  হয়  না  রামদাস  ।   ক্ষ্যাপা বাবা  এযে  অনেক ব্যাপার  গো  তুমি   তো  অনেক জানো  আরো  বলো  শুনি ।   ক্ষ্যাপা  বলে  কুণ্ডলিনী শক্তি  জাগলে  তার  অনেক  লক্ষণ  প্রকাশ পায়,   নানা রকম জ্যোতি  দর্শন  হয়  আর  বহ প্রকার  নাদ বাদ্য  শ্রবণ  হয়  ।   রামদাস   নাদ  ও জ্যোতি  কত  প্রকার  হয়  ক্যাপা ঠাকুর   ক্ষ্যাপা  বলে  জ্যোতি শত   কোটি  প্রকার ,  এবং  নাদ  কোটি  সহস্র  প্রকার  শাস্ত্রে  আছে  সাধক  এই সব  শ্রবণ ও দর্শন করে  থাকেন  ।  সুর্যের  মতন  এক  শুভ্র  জ্যোতি  আছে  যখন  সাধক  সেই  জ্যোতি  দর্শন করে  তখন  তার  মন কে  বলপূর্বক  ভেতরে  টেনে  নেয় ।  একেই বলে  মনের  অন্তর্মুখী অবস্থা  মন  অন্তর্মুখী  না  হলে  কুণ্ডলিনী শক্তি  জাগরিত হয়  হয় না  ।     কীর্তন  শুনতে বসলে  হুংকার করেন,  শরীর  কত প্রকার   কসরৎ  করতে  থাকে  ও  শরীর  কাঁপতে  থাকে  ।   মুখে নানা রকম মিষ্ট  রস  আস্বাদন অনুভব  হয়,   সমাধি  ভঙ্গে  যোগী  সেই  আনন্দ  প্রকাশ  করার  ভাষা  পায় না  তার  শরীর  কাঠের  মতন  হয়ে  যায় ।    খুলে যায়  সুসন্মা  দ্বার জেগে উঠে ক্ষেপী কুণ্ডলিনী  শক্তি  পেছনে  সিরদ্বারার  দিয়ে সর  সর  করে  মূলাধার  হতে  সহশ্রারে  উঠা  নামা  করতে  থাকে   তার পর  কুণ্ডলিনী  সহস্রারে  শ্রী ভগবান  প্রাণনাথ এর   সঙ্গে  মিশে  যায়  ।     কি  বুজলে  রামদাস  ?  কত  অপূর্ব  এই  যোগ  তত্ত্ব  তোমার  ক্ষ্যাপা  বাবা,  মনে  হয়  দিন রাত   শুনি  তোমার  মুখে  এই  মধুর  শাস্ত্র  কথা  ।   আরো বলো তুমি  ঠাকুর  বলে  রামদাস !      সমাধির  মধ্যে দিয়েই  ভগবৎ  দর্শন  লাভ  হয়  মাথার  ডান দিকে  নুপুর  ঝুন ঝুন  শব্দে  নুপুর  নাদ  শনে  সাধক  একটা  বাচ্চা  ছেলের  পায়ে  নুপুর পায়ে  হাঁটলে  যেমনটি   আওয়াজ  হয় ,  তখন  শ্রী ভগবান  যোগী সাধক  কে  দর্শন  দেন ।        বর্তমান  জীব  যে দেহ  ধারণ  করে আসে  পিতা ও মাতা  প্রদত্ত   সেটি  জীবের  স্থূল  শরীর,  মন, বুদ্ধি, অহংকার ও  ইন্দ্রিয়  এটি  জীবের  সূক্ষ্ম  শরীর,  আর  আত্মা  হচ্ছে  জীবের  আসল স্বরূপ কারণ  দেহ  এর  নামই  হলো  জীবাত্মা ।  এই  তিনটে কাপড় জড়িয়ে  গায়ে  কুণ্ডলিনী  শক্তি  অনাদিকাল  ধরে নিদ্রায়  অচেতন  হয়ে  আছে   অর্থাৎ  জীব  কে  মা  তার  মায়া  দ্বারা  অচৈতন্য করে  মায়ার  বন্ধন  সার  করেছেন ।   তুমি সেই মহা কারণের  দিকে  তাকাও   আমি  বলতে আমি  কিছু না,  আমি  আত্মা  অধুনা  আমি তোমার  দাস  হে  পরম ঈশ্বর  সব  তুমি  ।   এই  জগৎ  সংসার সব  মায়া  জেনে  কৃষ্ণ নাম  করে যাও   জেগে  উঠবে  বেটি  ও  তোমাকে   মহাকরণের  ( ভগবান  ) সঙ্গে  মিলিয়ে দিয়ে  তোমায়   মহা  মুক্তি  দান করবে ।  এ সব বেটির  খেলা,  মা  তো  তাই  তার  এই রূপ   খেলা  ।   কি  রামদাস  সব  বুঝতে  পারলে তো  !   এই  সব  গভীর  সাধন  রাজ্যের  কথা  মুমূক্ষ  সাধক কে  তার  সৎ গুরু  এই  সাধন উপদেশ  দান করেন  ।   আজকাল  সবাই  কত  বাজে বাজে  বই পরে কিন্তু  এইসব  শাস্ত্র  কেউ পরে  কই !  যার জন্য  মানুষের  দুঃখ  দুর হয় না ।   তোমার  এই  আদ্যাত্মি ক  তত্ব  জানার  আগ্রহ  দেখে  আমার  খুব  ভালো লাগছে,  চালাও  রাম নাম  বেটি  জাগলো  বলে ।   ক্ষ্যাপা বাবা আমার  না তোমার  ঐ নাম করতে  ইচ্ছে করছে , ক্যাপা  বললো  তবে আর চিন্তা কি  শুধু  নাম করে  যাও  তোমায়  পারের  ভাবনা  আর  ভাবতে হবে না  ।   জয়  সীতা রাম । চালাও  নাম  ।     এ গভীর সাধন তত্ব   এ শুধু  অনুভবের বস্তু  এ বলে  বোঝানো যায় না,  কি অনুভব হলো  তোমার বলো ?   মানুষের  মুক্তির   লাভের  একমাত্র  উপায়  এই  শক্তির কে  সাধনা করে  জাগিয়ে  তোলা,  যতক্ষণ  পর্য্যন্ত এই শক্তি না  জাগবে  ততদিন  সাধকের  জীবনে  কিছু হয় না ।      অষ্টাঙ্গ  যোগ  সাধন সব  কিছুই  কুলো কুণ্ডলিনী শক্তি র  জাগরণের  জন্য বাবা,  তুমি  সাধন  রাজ্যে  নিতান্ত  বালক  ধীরে  ধীরে  সব  বুঝবে  নাম করলে  সব  হয় ।   হরে কৃষ্ণ রামদাস  এখন  আমার ভগবৎ  সেবার  কাজ  করতে হবে  এই হলো কুণ্ডলিনী সাধন  তত্ত্ব  ।   এসো  রামদাস,   ক্ষ্যাপা বাবা কে  প্রণাম  করে  চলে  গেলো  রামদাস । 
আপনাদের  যেমন ভালো লাগে আপনারা  আমাকে  কমেন্ট করে জানান,  আমি  সেই ভাবেই  লিখবো  প্রিয় বন্ধুগন ।  এত সুন্দর  শাস্ত্র কথা যদি ভালো  না লাগে আমার  কিছুই বলার নেই ।  মানুষ বড়  মায়ার জীব হয়ে  গেছে তো  তাই তারা  শ্রী ভগবান কে ভালো বাসতে জানেনা  । যাই হোক ! 
     ক্রমশঃ~ 
         শ্রী কৃষ্ণ দাস সঞ্জয় শাস্ত্রী, নবদ্বীপ ধাম । 
  ফোনে কথা বলতে পারেন দরকার হলে ।
সবাইকে ধন্যবাদ পড়বেন ভালো লাগবে । 
( 6296935335 )/🙏🙏

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

sanjaykumar goswam104@gmail.com

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি