ভক্ত রাজ প্রহ্লাদের উপাখ্যান~ কাহিনী
ভগবান শ্রী বিষ্ণুর ধাম অনন্ত বৈকুণ্ঠ লোক ব্রহ্মার চার পুত্র সনোক, সনাতন, সত্যানন্দ ও সনতকুমার এরা মনস্থ করলেন যে বিষ্ণু লোকে যাবো, তারা বৈকুণ্ঠ লোকে এলেন বিষ্ণুর দর্শনে বাঁধা দিয়ে বললো বিষ্ণু দ্বারিগণ জয় ও বিজয় এখন ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না । প্রভু নারায়ণ বিশ্রামে আছেন ব্রহ্মার পুত্রগণ সবাই বলেন ব্রাম্ভনের জন্য অবারিত দ্বার, তোমরা দ্বার ছারো আমরা ভিতরে প্রবেশ করবো । জয় আর বিজয় ক্রোধে তারা চারজন কে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিল, ব্রহ্মার পুত্রগণ তখন ক্রধামব্বিত হয়ে অভিসম্পাত করলেন যে তোদের এত বড় সাহস তোরা বিষ্ণুর বৈকুণ্ঠ লোকে থেকেও তোদের মধ্যে এই রকম আসুরিক আচরণ তোদের আর এই বৈকুণ্ঠে থাকার কোনো অধিকার নেই তোরা মত্ব লোকে গিয়ে জন্ম নে । এইবার টনক নড়ল কি অপরাধ করলাম ! জয় ও বিজয় তাদের পা ধরে ক্ষমা চাইলেন তারা বলেন অভিশাপ ফিরিয়ে নেওয়া যায় না তোমরা নারায়ণের কাছে যাও তিনি সব করবেন । শ্রী বিষ্ণুর কাছে এসে বলল সব বৃত্তান্ত তারা শ্রী ভগবান বললেন অপরাধ করেছো যখন ফল তোমাদের ভুগতে হবে যদি শত্রু রূপে আমাকে পেতে চাও তাহলে তিন জন্ম পরে আমাকে পাবে তোমরা , আর যদি মিত্র রূপে আমাকে চাও তাহলে তোমরা আমাকে সাত জন্ম পরে পাবে । তোমরা কি চাও ? তারা বলে আমরা তোমাকে তিন জন্মে চাই প্রভু, শ্রী ভগবান বললেন তথাস্তু তাই হবে ! সত্যযুগে প্রথম হলো তাদের বড় ভাই হিরণ্যাক্ষ ও ছোটো ভাই হিরণ্যকশিপু দৈত্বরাজ ভয়ঙ্কর অত্যাচারী সমগ্র জগৎ তার ভয়ে ভীত, বড় ভাই হিরন্নক্ষ কে শ্রী বিষ্ণু বরাহ অর্থাৎ শূকর রূপ ধারণ করে বধ করেছেন । সেই থেকে হিরণ্যকশিপু শ্রী ভগবান কে শত্রুর চোখে দেখে তার স্ত্রীর নাম কয়াধূ স্ত্রীকে নিরাপদে দেবর্ষি নারদের কাছে রেখে বলে আমি তপস্যা থেকে যতদিন পর্যন্ত ফিরে না আসবো ততদিন আপনি আমার স্ত্রীকে রক্ষা করুন এই বলে সে মন্দার পর্বতে চলে গেলেন । এক লক্ষ বৎসর কঠোর তপস্যায় ব্রহ্মা কে প্রসন্ন করলো ব্রহ্মা দেখা দিয়ে বললেন কি বর চাও ! অসুরাজ বলে আমায় অমর বর দিন , ব্রহ্মা না অন্য বর চাও ! না দিবা না রাত্রি, না জলে স্থলে , না কোনো অস্ত্রের দ্বারা , নর কিংবা পশু ও ঘরে না বাইরে কোনো কিছুর দ্বারা আমার মৃত্যু হবে না । ব্রহ্মা বললেন তথাস্তু তাই হোক তোমার , এই বর দিয়ে তিনি অন্তর্ধান করলেন ।
এইদিকে নারদের আশ্রমে কয়াধূর গর্ভে এক দেব শিশুর জন্ম গ্রহণ করে, তার নাম রেখেছেন নারদ মুনি প্রহ্লাদ । এখন সে পঞ্চম বৎসর নারদ তাকে ও তার মাকে নিত্য হরি কথা শোনান, পরে ফিরে গেলেন পিতার কাছে পুত্র কোলে পেয়ে খুব খুশি হলো অসুররাজ । যুদ্ধে স্বর্গ রাজ্য জয় করে স্বর্গ রাজ্য থেকে দেবতাদের কে স্বর্গ হতে বিরারিত করলো । দেবতারা মনের দুঃখে বিষ্ণু লোকে গিয়ে শ্রী ভগবান কে সব বললেন শ্রী ভগবান বললেন ভয় নেই তোমরা জাও আমি সময় হলেই যাবো । দেবতারা প্রস্থান করলেন ।
প্রহ্লাদ কে গুরুকুলে বিদ্দাভ্যাসের জন্যে পেরণ করা হলো, গুরু শুক্রা চার্য্য বলেন পরতো বাবা ক খ ক শূমে প্রহ্লাদের কৃষ্ণ মনে পড়ে গেলো কাঁদতে থাকে প্রহ্লাদ । প্রহ্লাদ গুরুকুলের সবাইকে
হরিনাম এ মাতিয়ে তুললো , গুরু দেখলেন সর্বনাশ আর একে রাখা যাবে না , প্রহ্লাদ কে তার পি mতার নিকট পেরন করা হলো । প্রহ্লাদ কে কোলে বসিয়ে চুম্বন করে জিজ্ঞাসা করলো হিরণ্যকশিপু বাবা প্রহ্লাদ গুরুর কাছে কি শিক্ষা করেছো তুমি আমাকে বলো । প্রহ্লাদ বলে পিতা হরি আমাদের সকলের উপাস্য ও আমাদের তার নাম করা উচিৎ তিনি সকলের মধ্যে রয়েছে প্রাণ স্বরূপে আর তিনি আমাদের রক্ষা কর্তা , হরি বাসুদে বময় আপনি তার ভজনা করুন পিতা !
কি আমার পুত্র হয়ে আমার কাছে আমার মহা শত্রু সেই হরির কথা বলছে এই তোরা কে আছিস একে নিয়ে গিয়ে পাহাড় থেকে নিচে ফেলে দে, সৈন্যগণ প্রহ্লাদ কে নিয়ে পাহাড় থেকে খাদে ফেলে দিল, কিন্তু শ্রী ভগবান তাকে কোলে তুলে নিলো । আরে প্রহ্লাদ মরলো না মহারাজ তোরা এবার ওকে একটা মাতাল হস্তীর সামনে ছুড়ে ফেলে দে । তাই করা হলো কিন্তু হস্তী ঐরাবত তাকে না মেরে প্রহ্লাদ হরি ভক্ত জেনে তাকে নিজের সুরে জড়িয়ে ধরে মাথায় নিয়ে নিত্য করতে লাগল , যেনে ভীষণ রেগে বললো একে বিষাক্ত সর্পময় কারাগারে নিক্ষেপ কর তোরা ।
একটা ভয়ঙ্কর কারাগারে ফেলে দিল বিষাক্ত সফেরা তাকে ঘিরে নিত্য করছে আর ভক্তরাজ প্রহ্লাদ শ্রী মন নারায়ণ নারায়ণ হরি হরি গান গাইতে লাগলো । পিতা হিনন্নকষিপু মাতা কোয়াধু কে আদেশ করে বললো তুমি নিজের হাতে পায়সের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খেতে দাও প্রহ্লাদ কে আর ওকে বলবে এটা বিষ্ণুর প্রসাদ । প্রহ্লাদ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে ভক্তি ভরে সেই পায়োস ধরে জয় শ্রী নারায়ণ বলে খেয়ে নিল মরণ হলো না তার ।
বিশেষ চিন্তায় পড়লেন অসুররজ এই ছেলেই আমার মৃত্যুর কারণ হয়, একে হত্যা না করতে পারলে আমার শান্তি হবে না । এই সময় হাজির হলো এসে দৈত্বরাজের কনিষ্ঠ ভগ্নি হোলিকা সে বললো দাদা আমি অগ্নি সাধন সিদ্ধি অর্জন করেছি । তুমি এখানে অগ্নি কুণ্ড প্রজ্জ্বলিত করো আর আমি সেই অগ্নি তে প্রহ্লাদ কে নিয়ে প্রবেশ করি , কিন্তু সেই আগুনে প্রহ্লাদ পুড়ে ছাই হবে কিন্তু আমার কিছুই হবে না ।
অশুররাজ বলে তাই হোক বিশাল অগ্নি কুণ্ড জ্বালানো হলো তার মধ্যে হোলিকা প্রহ্লাদ কে নিয়ে প্রবেশ করলো বিকট আওয়াজ করে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো হোলিকা, প্রহ্লাদের কিছুই হলো না কারণ ভগবানের ভক্ত কে স্বায়ম অগ্নিদেব কোলে করে বসে আছেন । প্রচণ্ড ক্রোধে জ্বলে উঠল অসূররাজ প্রহ্লাদ কে বললো তোর হরি কোথায় থাকে ? কি করে সে ? কি শক্তি তার তুই আমাকে বল ? প্রহ্লাদ বলে হে পিতা আমার হরি সর্বত্র বিরাজমান তিনি কোথায় না নেই , আর তিনি ভক্ত বৎসল ভক্ত কে রক্ষা করেন ও অধর্মের বিনাশ আর ধর্মের স্থাপন করেন তিনি । তিনি সর্ব শক্তিমান তিনি ইচ্ছা করলে এই অনন্ত ব্রম্ভান্ড মুহূর্তের মধ্যেই লয় ও প্রলয় করতে পারেন ।
কি এত বড় কথা আমাকে দেখাতে প্যারিস তোর সেই হরি কি এই ফটিক স্তম্ভের মধ্যে রয়েছে বল তুই আমাকে ? প্রহ্লাদ বলে হ্যাঁ পিতা আমার শ্রী হরি এই ফটিক স্তম্ভের মধ্যে রয়েছে । দানব রাজ সজোড়ে এক পদাঘাত করলেন তিনি সেই ফটিক স্তম্ভের মধ্যে , দেখলো এক বিরাট দেহী অর্ধ নর ও অর্ধ পশুর নরসিংহ রূপ ধারী ভয়ঙ্কর গর্জন করতে লাগলেন, সূর্য্য সম তার জ্যোতি ঘরে ও বাইরে মরবে না তাই তিনি বসলেন চৌকাঠে । নর ও পশু কেউ না তাই তিনি নরসিংহ , দিন ও রাতে মরবো না সেই সময় সন্ধাকাল উপস্থিত । কোনো অস্ত্রের দ্বারায় না সে কারণে শ্রী ভগবান নিজের নখ গুলো কে অস্ত্র করলেন এবং হিরণ্যকশিপু কে আপন উরুর উপরে শোয়ালেন পরে নখ দিয়ে তার পেট ও বুক বিদীর্ণ করে তার নারী ও ভুরি বের করে পৈতের মতন ধারণ করেছে , রুধির সর্ব অঙ্গে লেপন করলেন । তার গর্জ্জনে ত্রিভুবন টলমল করছে মা লক্ষ্মী এলেন তাকে শান্ত করতে এমন এক গর্জ্জন করলো ভয় পেয়ে লক্ষ্মী বৈকুণ্ঠে পলায়ন করলেন ।
কারোর কাছে যাবার সাহস হচ্ছে না , নারদ মুনি বললেন দেবগণ ভক্তের আঘাত শ্রী ভগবান সহ্য করতে পারেন না যার জন্য এই ক্রোধ মহা বিষ্ণুর সেই প্রহ্লাদ পারবে তাকে শান্ত করতে । দেবগণ গিয়ে প্রহ্লাদ কে বলে ও প্রহ্লাদ স্তব করতে লাগলেন নয়নের জলে !
" উগ্রং বিরোং মাহাবিষ্ণু জলন্ত সর্বত্র মুখোং
নির্শিংহ ভিশনং ভদ্র মৃতুং মৃতুং নমাম্মহম " !
শ্রী ভগবান বিষ্ণু প্রহ্লাদ কে কোলে তুলে তার সর্ব অঙ্গ প্রভু নিজের জিহ্বা দ্বারা লেহন করতে লাগলেন যেমন একটি সিংহ মা তার সন্তানের শরীর লেহন করে থাকে । কি অপূর্ব
ভক্ত আর ভগবানের মহা মিলন । আবার সব শান্ত হলো শ্রী ভগবান বিষ্ণু প্রহ্লাদ কে রাজ্য দিয়ে আশীর্বাদ করে এবং অরি বিনাশ করে শ্রী ভগবান বিষ্ণু বৈকুণ্ঠ লোকে গমন করলেন ।
Hello Flow me
উত্তরমুছুন