ভ্রমণ কাহিনী পুরী
জয় জগন্নাথ স্বামী নয়নও পথ গামী ভবতূ মে, জগন্নাথের বদন হেরি জগন্নাথ কাঁদিছে । গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু আমাদের সচল জগন্নাথ নবদ্বীপ চন্দ্র শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্যদেব সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করার পর মায়ের আদেশে প্রভুর লীলা চলে বাস, তখন পুরীর মহারাজা ছিলেন প্রতাপ রুদ্র ও 9গুরুদেব কাশী মিশ্র যে বাড়িতে থাকতেন চৈতন্যদেব তার বাড়িতে থাকতেন । সেই ঘরটি বড়ই ছোট্ট ছিল কিন্তু প্রভু ছিলেন বিরাট পুরুষ আজনুলম্বিত বহু সেখানে সেবক হিসেবে গোবিন্দ দাস আর থাকতেন রায় রামানন্দ ও স্বরূপ দামোদর পণ্ডিত, দিনে নিত্য কীর্তন আর জগন্নাথ দর্শন রাত্রে রায় ও স্বরূপ সনে কৃষ্ণ কথা আলাপন । কেনো ! না প্রভু রাধা ভাবে বিবাবিত তিনি রাধা ভাব নিয়ে এসেছেন ব্রজেন্দ্র নন্দন শ্রী কৃষ্ণ আর ব্রজের শ্রীমতী রাধারাণীর সখী হলেন রায় রামানন্দ বিশাখা ও স্বরূপ হলেন ললিতা সখী , সারা রাত রাধা ভাবে তাদের সঙ্গে কৃষ্ণ কথা বলতেন । সে প্রেম রস নিগূঢ় তত্ব কথা যা সাধারণ জীবের বোধ গম্য হয় না, অষ্ট সাত্ত্বিক ভাবে বিকার হতো প্রভুর মুখ ঘষতেন মাটিতে মুখ থেকে রক্ত ঝরে পরতো উন্মাদের মতো রাধা হয়ে হা প্রাণনাথ কৃষ্ণ বলে কাদেন প্রভু । এই ভাবে লীলা করেন গৌর ভগবান অপরূপ লীলা , আমাদের পুরী এক্সপ্রেস সকাল সাতটা নাগাদ এসে পৌঁছলো পুরীর স্টেশনে, আমরা এসে উঠলাম স্বর্গদ্বারে এক ঠাকুমার বাড়িতে । আমাদের দেখে ঠাকুমা খুব আনন্দ হলো মনে তার পর আমরা সমুদ্রে থেকে স্বা ন সেরে এলাম, এই সমুদ্রের অভিজ্ঞতার কথা আমি পরে বলবো । মধ্যাহ্ন এ সেবা শান্তি করে বিকালে দর্শন করতে বেরোলাম শ্রী জগন্নাথদেবের মন্দিরে এসে বেদীতে জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রা কে দর্শন করলাম সেজে কি আনন্দ অনুভূতি বলে বুঝাতে পারব না । অপূর্ব মুরতির দর্শন জগন্নাথদেবের কপালে কোহিনুর হীরে শোভিত আর বলরামের কপালে চুনী বিরাজ করছে এবং ভগ্নী সুভদ্রার কপালে শোভা পাচ্ছে পান্না,,
মন্দিরের চতুর্দিকে চারটে দরজা আছে এই মন্দির ও জগন্নাথদেবের প্রতিষ্ঠা করেন সত্যযুগে মহারাজ ইন্দ্রদুমনো এনি ছিলেন স্বর্গের দেবরাজ ইন্দ্র দেব, তারই বংশধর এই রাজা প্রতাপ রুদ্র ।
জগন্নাথদেবের সম্মুখে বিরাট এক গরুর স্তম্ভ তার পাশে আছে নিম্ন খল, মহাপ্রভু যখন গরুর স্তম্ভের আড়ালে দাঁড়িয়ে জগন্নাথ দেবের দর্শন করেন আর প্রাণনাথ বলে কদেন প্রভুর সেই নয়ণের জলে সেই খালটি ভোরে যেত, ডানদিকে রান্নাঘর বিশাল সেই ঘর প্রতিদিন শতমন চালের ভোগ হয় একের পর এক হাড়ি অন্ন আর ডালের হারি চাপিয়ে দরজা বন্ধ করে বাইরে চলে আসে , ডালে
কোনো মশলা দেওয়া হয় না কিন্তু তার স্বাদ আপনি না পেলে বা খেলে বিশ্বাস করবেন না
শাস্ত্রে বলেছে সাক্ষাৎ বৈকুণ্ঠের ঈশ্বরী কমলা নাকি নিজে এসে সেই রান্না করেন,
এত প্রসাদ পাই বহু জায়গায় কিন্তু পুরীর
এই মহাপ্রসাদ এর মতন কি অপূর্ব সুঘ্রাণ আর সুস্বাদ আমি কোথাও পাইনি । দেখলে
আমার মনে হয় কত না পেট ভোরে খাবো কিন্তু বিশ্বাস করুন অল্প পেলেই আমার পেট
ভোরে যায় বেশি আর খেতে পারি না । কি আশ্চর্য ! যাই হোক,
আপনেরা অনেকেই জানেন না মন্দিরে বাম দিকে একটি কল্পতরু বকুল বৃক্ষ আছে
শুনেছি তার মুলে বসে যে যা চায় সে তাই পায় । আমি একবার বসেও ছিলাম একটা
ফল পেয়েছি সত্যি, মন্দিরে পশ্চিম দ্বারে
বাস করে লক্ষ লক্ষ বাদুড় সারাদিন খালি তারা কিচ কিচ করেই যায় , জগন্নাথদেবের চার দ্বারে চার দেবতা দ্বার রক্ষা করছেন । পাশে মাতা বিমলা অবস্থান করছেন মা বিমলার দ্বাপর্জুগের
খুব সুন্দর একটি কাহিনী আছে, জগন্নাথদেবের ভোগ হলে পরে মা বিমলার সেই প্রসাদ ভোগ হয়
তবেই হয় মহাপ্রসাদ । আবার এই মহাপ্রসাদ যায় ভুবনেশ্বর শিবের কাছে তবেই শিবের ভোগ
হবে না হলে শিব খাবেন না শাস্ত্রে আছে ।
চারদিকে কত দোকানে খাজা , গজা, নিমকিন, পসারীরা বিক্রয় হচ্ছে , খুব ভালো লাগছে মন্দিরের সুন্দর দৃশ্য সব ।
স্বর্গদ্বরে নানান রেসর্ট বড় বড় অনেক হোটেল রয়েছে , ট্যুরিস্টদের ভ্রমণের জন্য অনেক সুপার বাসের অফিসও আছে আগেরদিন টিকিট বুক করতে হয়, নানান দূরের দর্শনীয় স্থান সব ওরাই ঘুরিয়ে দেখায় যেমন আপনার চিড়িয়াখানা আনন্দকানন, ও কনারক সূর্য্যমন্দির, ভুবনেশ্বর মহাদেব , ১৮, নালা আরো অনেক কিছু দেখার আছে ।
অনেক মন্দির আছে তার মধ্যে বিশেষ বিক্ষাতো ঝাজ পিঠা মঠ নামাচর্য্য শ্রী হরিদাসের মন্দির সিদ্ধবকুল বৃক্ষ ।
জগন্নাথদেবের মাসীর বাড়ি গুন্ডিচা জগন্নাথের মন্দির থেকে এক মাইল দূরত্ব
হবে , স্বর্গোদ্বারে সন্ধ্যের পর কি অপূর্ব দৃশ্য
হয় এত সুন্দর আনন্দ উপভোগের জায়গা
আপনি না গেলে বিশ্বাস করতে পারবেন না ।
ঘরে বসে থাকলে এই সব আনন্দ উপভোগ হয় না , এর জন্য ভ্রমণের প্রয়োজন হয় ।
শ্রী ভগবান কত সুন্দর করে তার এই
প্রকৃতিকে সাজিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য
যা কোনো ভাষা নেই যে আমি বর্ণনা করে
বলতে পারি, জিস্কে রচনা ইত্না সুন্দর
ও কিত্না সুন্দর হোগা, একটা হিন্দি গান
আছে না ! যাই হোক। গুন্ডিচা মন্দির টা
খুব সুন্দর সবাই বলে এটা নাকি জগন্নাথ দেবের মাসীর বাড়ি কিন্তু তা না তার মাসী বলে কিছু নেই কারণ তিনি শ্রী ভগবান , শ্রী কৃষ্ণ শত বৎসর মথুরায় কাটানোর পর আবার তিনি বৃন্দাবনে রাধারাণীর সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন পরম বৈষ্ণব অক্রুরের রথে করে
সেই কারণে রথে করে জগন্নাথ গুন্ডিচা
বৃন্দাবনে আসেন এবং সাতদিন ছিলেন
এটা হলো সোজা রথ এটাই গৌরীয় বৈষ্ণবদের দর্শন করা কর্ত্তব্য , কিন্তু উল্টো রথের কারণ হলো পুনরায়
শ্রী কৃষ্ণের বৃন্দাবন পরিত্যাগ করে দ্বারকায় গমন করা , এই জন্য রাধা দাসী ভাবে যারা ভজন করেন তারা কখনোই নিজ রাধারাণীর থেকে শ্রী কৃষ্ণ কে বিচ্ছেদ করেন না । সে কারণে
গৌড়িয় ভক্ত গণ উল্টো রথ দর্শন করেন না । আর এটাই হলো আসল জগন্নাথের মাসীর বাড়ি যাওয়ার রহস্য ।
গুন্ডিচার প্রধান পান্ডা মহাশয় অনেক কিছু জানেন । এই খানে রাধারানী আছেন কিন্তু জগন্নাথ মন্দিরে
তিনি থাকেন না , ওখানে লক্ষ্মী আছেন । তাহলে বুঝতে পারলেন তো । জগন্নাথ মন্দিরে সোজাসুজি সাদা রঙের
বিশাল এক প্রাসাদ বাড়ী আমি জিজ্ঞাসা করলাম ঐটা কি ? পান্ডা বললো যে ওটা পুরীর রাজার বাড়ী , মহারাজ গজোপো তি সিং দেব ওই
রাজবাড়ীতে থাকেন । তবে আরো বলেন তিনি রাজা বেশীর ভাগ রানী মাকে নিয়ে আমেরিকায় থাকেন এখানে আসেন এই রথের সময় কারণ
রাজা রথের আগে ঝাড়ু না দিলে জগন্নাথের রথ চলবে না । আমি দেখলাম সামনের জানালা দিয়ে সারা শরীর নুরির ।মতন সাদা বেশ পরে শ্রী
জগন্নাথ কে প্রণাম করলেন চুড়ার দিকে
চেয়ে , পরে জানলাম উনি রানী মা ছিলেন । রানী নেপালের রাজ কন্যা হন
পান্ডার সঙ্গে আমার খুব বন্ধুত্ব হয়ে যায় খুব ভালো মানুষ সে , তার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু জানতে পারি । আমরা সবাই বাসায় ফিরে এলাম রাতে খাবার খেয়ে আমরা সবাই
শুয়ে পরলাম । পরদিন সিদ্ধ বকুল গেলাম সেখানে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর পর্ষদ নমাচর্য্য শ্রী হরিদাস ঠাকুরের সমাধি ও মন্দির আছে, খুব সুন্দর মন্দির মঠের মহন্ত মহারাজ বললেন প্রসাদ পেতে আমরাও জয় নিতাই গৌর হরি বোল বলে প্রসাদ পেলাম । দুপুরে সেখানে বিশ্রাম নিয়ে আমরা সীতারাম বাবার মন্দিরে এলাম এখানে মহাপুরুষ সীতারাম বাবা শ্রী ভগবান জগন্নাথ দেবের দর্শন লাভ করেছিলেন । পুরীতে অনেক দর্শনীয় স্থান দেখার আছে , বলা বাহুল্য বেশি বর্ধিত হওয়ার কারণে আর বাড়ালাম না । যেমন কনারক, নন্দন কানন ও ভুবনেশ্বর মহাদেব, ১৮ নালা, খির চরা গোপীনাথ , এই সবের কাহিনী আছে এমনি হয় নি কিছু ।
এইবার আমাদের বাড়ী ফেরার পালা ঠাকুমার কাছে বিদায় নিয়ে আমরা আরার পুরী এক্সপ্রেসে উঠলাম
প্রভু শ্রী জগন্নাথ দেবকে কোটি কোটি প্রণাম জানালাম , আমাদের ট্রেন সন্ধ্যে সাতটায় ছাড়লো । প্রায় একমাস ছিলাম আমরা পুরীতে , আমরা আরো দুবার পুরী গিয়েছিলাম একবার রথ যাত্রায় ও জগন্নাথ দেবের স্বান যাত্রায় ভীষণ আনন্দ হয়েছিলো ।
সে ঘটনা আবার পরের ব্লগে লিখবো
ভালো লাগলে জানাবেন একটু কষ্ট করে পড়বেন ভালো লাগবে । ধন্যবাদ সবাইকে ।
ক্রমহ ~
শ্রী কৃষ্ণ দাস সঞ্জয় শাস্ত্রী, নবদ্বীপ ধাম ।
জয় শ্রী কৃষ্ণ
উত্তরমুছুন