রাজকুমারী পৃথা ~ মহাভারত !

    রাজকুমারী  পৃথা ~ কুন্তী  ভোজ  রাজ্যের  মহা রাজা কুন্তী ভোজ  তার কন্যা ছিলেন  পৃথা,  মহাভারতে  যে  পান্ডু পত্নী  কুন্তী নামে অভিহিত ।
  ইনি রূপে গুনে অতুলনীয়  যা বলার  ভাষা নেই ।   সখীদের  সঙ্গে ফুল তলে  পৃথা  রাজ  বংশের  কুলো দেবতা  ভগবান শ্রী বিষ্ণুর  জন্য  নিজে হাতে  মালা গাথে  সে  পরম দেবতার  অর্চনার  পুজোর যোগার  করে  নিজ হাতে  সে ।   এখন  পৃথা  যুবতী  হয়েছে   পূর্না যৌবনা  লাবণ্য  উপচে পড়ছে তার  সর্ব অঙ্গে,   খুব  হাসি খুশি আর প্রাণবন্ত  সখীদের  সঙ্গে ঘুরে  বেড়ায়  ফুলের  বাগানে ও আপন মনে  গান  গায়,  ফুল বাগানে ফুটলো কত নানা রঙের  ফুল দেখলে  হয় প্রাণ আকুল । 
    একদিন  হঠাৎ  স্বশরীরে  এসে  উপস্থিত হলেন  মহামুনি  দুর্বাসা  ভয়ঙ্কর  ক্রধী  ও  কঠোর তপস্বী  রাজা  কুন্তী ভোজ এর রাজ প্রাসাদে  আতিথ্য গ্রহণ করলেন  মহামুনি,  মহারাজ  নিজ কন্যাকে  মহামুনির  সর্বদা সেবা  কার্য্যে  নিয়োজিত  করে  রাখলেন ।   পৃথা  মুনি সেবার কোনো কার্য্যে  তার কোনো  ত্রুটি  বিচ্ছতি  হয় না  মুনি ভরে তপস্যায়  চলে যায়  আবার কোনো ঠিক নাই  সে কখন  ফিরবে  কিন্তু  তাকে জেগে বসে  থাকতে  হয়  মুনির  সেবার  কারণে  কেনো না মুনির যে  প্রচণ্ড ক্রোধ   রেগে আবার  কখন যে  অভিশাপ  দিয়ে দেন  তাহলেই  সর্বনাশ,  মুনি ভোজন  সেরা  শয়ন  করলে  পৃথা তার পদ সেবা করে  মুনি কে  ভোজনের  পারস  সামনে  এনে  দেন  ও  মুখ ধোয়ার জল  দেন  নিজের শাড়ির আঁচল  দিয়ে  মুনির  পা  মুচ্ছিয়ে দেয়  রাজকুমারী  ।

    নানান ভাবে পৃথার  সহ্যের আর  ধৈজ্জের  পরীক্ষা করেন মুনি  দেখে যে সবার কোনো  ত্রুটি করে কি না  সে,  একদিন  রাত  তিনটার  সময়  এলেন  মুনি  এসে বললো  পৃথা তুমি  এখনও  শয়ন  করো নি  কেনো  তুমি যে  ঘুমে  ঢুলে  পড়ছো  রাজকুমারী   তুমি তো রাজ কন্যা তোমার  এত  কষ্ট  সহ্য হবে কি ভাবে ?  যাও  শুয়ে  পরো  পৃথা  বললো না মুনিবর   আপনার  সেবা  বাকি  আছে যে  আমার কত  সৌভাগ্য  যে  আপনার  ন্যায়  মহামুনিবরের  সেবা  লাভ  করেছি আমি  আপনি ভোজনে বসুন  আপনার পদ  সেবা  করে  আমি যাবো ।  মুনি বললেন  তাই হোক দেবী  ! 
      প্রাতঃকালে  মুনিবর  আজ  বিদায়  নেবেন   অনেকদিন হলো রাজ প্রাসাদে মুনির মন লাগছে না  তার  অরন্নই  ভালো  তাই তিনি  ডেকে  পৃথা  কে  বললেন  এত দিন  তুমি  আমার  যা  প্রাণ ঢালা  সেবা  করলে  তাতে আমি খুব সন্তুষ্ট  হইয়াছি  তুমি কি  বর  চাও  আমি তোমাকে  দিতে  চাই  ।   পৃথা  বললো  আমি  হে মুনিবর  আপনি  আমাকে  এই বর  দিন  আমি  যখন যে দেবতাকে  আবাহন  করবো  সেই দেবতাই  যেনো  আমার কাছে  আসে,  মুনিবর  বললেন  তথাস্তু তাই হোক  !  এই  বলে  দুর্বাসা মুনি  চলে  গেলেন  বনে ।

    অনেকদিন হলো মুনি বর দিয়েছে কিন্তু কোনদিন তো পরীক্ষা করে দেখি নি  কতটা  সত্যি  সেটা একবার  পরীক্ষা করে দেখতে  হবে ,   রাতে এই চিন্তা করতে করতে ঘুমায় সে সকালে চোখ খুলে  দেখলো  মহা তেজস্বী  অনন্ত  জ্যোতির্ময়  মহা বলশালী  দিবাকর  সূর্য্য জগৎ কে আলোকিত  করছে    সেই ভাস্কর কে  দেখে  পৃথার  কামনা জাগলো  তার প্রতি  তাই  সে  সেই  দিবাকর কে  আবাহন করলেন  দুর্বাসা মুনির মন্ত্রে  ।  এলেন  সূর্য্যদেব  বললেন  হে দেবী তুমি আমাকে  ডাকলে কেনো ?  পৃথা বললো আমি  মুনির  মন্ত্র পরীক্ষা করার জন্য  আপনাকে  ডেকেছি  ।  সুর্য্যদেব  বলেন  তুমি তোমার মনে  কামনা  করে আমায় ডেকেছো   তুমি  ঋতু স্বান  করিয়াছ আজ  ষষ্ঠ  দিন হলো  এখন তুমি আমায় গ্রহণ  করো  ।  পৃথা বললো আমি কুমারী নারী  এযে  আমি ধর্ম ভ্রষ্ট ও  নড়কগামি  হবো দেব ,  না না  এ কখনোই সম্ভব নয়  আপনি ফিরে যান  ।   সূর্য্যদেন  বলে  তাহা হয় না দেবী   দুর্বাসামুনির  বর  কভু মিথ্যা  নাহি  হয়  তোমার কামনা   পূর্ণ  করতে  দাও  মোরে  তোমা সনে  মিলন করি আমি যাই ফিরে   স্বর্গ পুরে , এসো দেবী  তোমার রূপ ও যৌবন  আমাকে  মুগ্ধ করেছে  তুমি আমাকে  আর প্রত্যাখ্যান  করো না  দেবী  ।   পৃথা বললো  না না  আমি  অসতী  হইয়া  কুমারী  মা  হলে  জগতে আমি কলঙ্কিনী  হবো  তাহা হয় না  আমি  মুনি মন্ত্র  করিতে  পরীক্ষা  করিয়াছি  দেব  আপনারে  আবাহন  আমি জানি  মিথ্যা  হইবে না  মুনির  বচন ।   সূর্য্য দেব  বলে যদি  আমা  সনে  মিলন করিতে নাহি  চাও  তবে  তব  নাভি  পর্শ  করিবো  আমি   মুনি  বাক্য  হবে  রক্ষা  তবে,    এই বলে  দিবাকর  পৃথার  নাভি   পরশ  করিল  আর বলিল  তিনি  তোমার  গর্ভে  যে  পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ  করিবে  সে  আমার  ন্যায়  হবে  মহা তেজস্বী আর  মহা  পরাক্রমী  সূর্য্য পুত্র নামে  তার  জগতে হইবে  পরিচয়  দেবী  !   এই বলে  সূর্য্য দেব অন্তর্ধান  করলেন  ।
         রাজা কুন্তী  ভোজ এর  কন্যা  বলে  পৃথার এক  নাম হলো  রাজকুমারী  কুন্তী ,  কুন্তী  যথা  সময়ে  এক  দেব শিশু জন্ম  দিলেন  কিন্তু সে যে কুমারী  কি রূপে  প্রকাশ করবে এই  কথা  বাবা ও  সবাই কে  এই  লজ্জার মুখ  কি করে  দেখাবে সে,  কি বলবে তারা সবাই  আমাকে  ব্বাভিচারিনি  ও অসতী বলবে  সবাই  আমি  কি  করিব  এখন !  তাই  গভীর  রাতে  নদী তীরে  গিয়ে  কর্ণ  দিয়ে  প্রসব করেন  পুত্র কে  তার  নাম দিলেন  কর্ণ  ।  একটি  বেতের  ঝুড়িতে  রাজ বস্ত্র  পরালেন  এবং  সর্ব অলংকারে  সাজিয়ে  পুত্র কে  নদীর  জলে  ভাসিয়ে  দিলেন  কুন্তী  তাকে  বুকে জড়িয়ে ধরে  ললাটে  শেষ  চুম্বন   করে  ।  হে  সূর্য্য দেব  তুমি  রক্ষা  করো  তোমার  সন্তান  কে  ।  
ভাসতে ভাসতে  যেতে  লাগলো  ঠিকানা  বিহীন  অজানা  দেশে,  ফিরে  এলো  কুন্তী  নিজের  ঘরে  কেউ এ কথা  জানল  না  শুধু   মাত্র  জানলো  কুন্তী  নিজে  ।   

ক্রমশঃ  এর পর  কুন্তীর  বিবাহ কাহিনী  আছে ।
      সে এক  বিরাট  পর্ব  এখানে  সংক্ষিপ্ত  রূপে  পৃথার  কথা  লেখা  হলো  পরে আবার  এই  বিষয়ে  আমি  লিখবো  ।  সমাপ্ত  ।

      লেখক কবি সঞ্জয় ~  1/5/2023/  

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

sanjaykumar goswam104@gmail.com

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রঘুনাথ দাস গোস্বামী

Ramayon Ki Mhima