ভ্রমণ কাহিনী আসাম~

ভ্রমণ কাহিনী~ কামাক্ষা মায়ের দর্শন ! 

   আসাম গৌহাটি কামরূপ কামাক্ষা, খুব জাগ্রত এই মহাদেবী পুরাণে বর্ণিত আছে যে সত্যযুগে পিতা দক্ষের নিজের স্বামীর নিন্দা শুনে সহ্য করতে না পেরে সতী দেহত্যাগ করেন । তখন শিব অতি ক্রোধে রাজা দক্ষের মস্তক কেটে ছাগ মুণ্ড বসিয়ে দেন, পরে উন্মত্ত পাগলের মতন সতীর দেহ কন্দ্ধে করে ত্রিভুবন নৃত্য করে বেড়াতে লাগলেন । দেবতারা সেই প্রলয় নৃত্য দেখে তারা ভিত হয়ে শ্রী ভগবান বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলো, শ্রী ভগবান বললেন হে দেবগণ বলো সমাচার তোমরা আমার কাছে এলে কেনো ? দেবগণ বলেন হে বিষ্ণুদেব এই বুঝি ত্রিভুবন ধ্বংস হয়ে যায়, ভোলানাথ সতী হরা হয়ে যে ভাবে নৃত্য করছে। বিষ্ণু তখন নিজের সুদর্শন চক্রের দ্বারা সতী দেহ একান্ন ৫১, ভাগে খন্ড খন্ড করে নানান স্থানে পতিত হয়, এবং সতীর যোনি পতিত হয় এই আসাম কামরূপ পাহাড়ে। এর অনেক ইতিহাস আছে সতী দেহ হারা হয়ে শিব শান্ত হয়ে তিনি বসলেন । আমরা নিজ বাড়ি নবদ্বীপ হইতে গৌহাটি হাওরা কামরূপ এক্সপ্রেস রিজাবেশন করে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আমি বাবা ও মা সবাই উঠে বসলাম ট্রেনে । ঝড়ের বেগে ডের দিন পরে এসে পৌঁছলাম গৌহাটি, আমরা এসে উঠলাম আমাদের এক শিষ্য বাড়ি রিহাবারী উলুবারী তে । সেখানে পরেরদিন সকালে কিছু জল খাবার খেয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম মা কামাক্ষা দর্শনের উদ্দেশে, আমাদের ট্যাক্সি এসে দ্বারোলো পাহাড়ের নিচে ড্রাইভার বললো এবার আমরা পাহাড়ে উঠবো। সে যে কি আনন্দ হলো আমার কি আর বলবো আমি, অ্যাডভেঞ্চার~ এযেন এক নতুন পাহাড়ে চড়ার দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা বলার ভাষা নেই আমার । আমাদের গাড়ি পাহারারের উপরে উঠতে লাগলো পাহাড়ের গা বেয়ে আবার অনেকক্ষন উঠার পর যখন নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি ভিষণ ভয় হয়, সব কত ছোটো দেখাচ্ছে যদি কোনো গাড়ি খাদে পরলে কি হবে জয় মা কামাক্ষা রক্ষে করো মা । ভয় ও আনন্দ মনে নিয়ে এসে নামনাল মায়ের মন্দিরে । চার দিকে নানান দোকান পাঠ বসেছে খুব সুন্দর লাগছে শোভা টা মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম কি বিরাট দর্শনের লাইন বাবরে, মন্দিরের পাশে এক বিরাট সরোবর তার জল কি ভারী মনে হয় পাহাড়ের উপরের জল বলেই এত ভারী । এই সরোবরে নাকি মায়ের এক আংটি রহস্য আছে, মন্দিরের পিছনে এক অনেক বড়ো বলীর আটচালা এখানে দূর্গা পূজার মহানবমী তে মোষ বলি হয়। খুব সুন্দর এক ফুলের বাগান কত সুন্দর লাগছে শোভা সেই ফুল গুলো, আর মন্দিরের কিছুটা দূরে স্বশান এই স্বস্বানে এখানকার যেসব মায়ের ভক্ত পান্ডারা বাস করে তাদের দাহ কার্য্য করা হয়। কিন্তু মনোরম পরিবেশ অনেক তন্ত্র সাধক সেখানে তন্ত্র সাধনা করছেন । পাশ দিয়ে উঠে গেছে একেবারে চূড়ায় কয়েক মাইল চড়াই উতরাই দুর্গম রাস্তা সেখানে ভুবনেশ্বর মহাদেব আছেন আমি সেখানেও গিয়েছি তবে অনেকে যেতে পারে না কামাক্ষা থেকে ফিরে আসে শুনেছি। কিন্তু আমি খুব জীদ করেই গিয়েছিলাম যে এখানে যদি আবার মরণ হয় হবে তবুও আমি যাবো দেখবো শেষ উপরে কি আছে মাকে দেখবো কিন্তু বাবাকে দেখবনা না আমি বাবা শিবকেও দেখে যাবো । এই প্রসঙ্গে আমি পরে আসবো আগে মায়ের দর্শন করি, প্রথমে আমরা মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করলাম খুব সুন্দর শান্তির জায়গা মা কামাখ্যার পূর্ণ মূর্তি স্থাপন করা আছে নিত্য পূজো হচ্ছে, মন্ত্র পাঠ হচ্ছে কি আনন্দ হচ্ছে মনের মধ্যে তারপর আমরা মন্দিরের ভেতরের সরু লোহার সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম একজন করে নামতে ও উঠতে পারে খুব রিস্ক সাবধানে, একে মা  কামাখ্যার পাতাল গুহা বলে খুব অন্ধকার দিনে সূর্য্য প্রবেশ করতে পারে না। ইলেকট্রিক বিদ্যুৎ জ্বালাবার নিয়ম নেই সেখানে বিশাল একটা ঘিয়ের প্রদীপ জ্বলছে কি আৰ্শয্য যোনি মন্ডল আকারে মা কামাখ্যার সিদ্ধ যোনি পীঠ কি অপূর্ব সুন্দর দর্শন, ঐ পাহাড়ের গহ্বরে কি করে যে দীর্ঘকাল ধরে সেই যোনি পীঠ থেকে সবসময় অনবরত জল যে কোথা থেকে আসছে আজ প্রযন্ত কেউ বলতে পারে না । কল কল করে সেই জল পরেই যাচ্ছে কি মায়ের মহিমা বলুন, আপনারা যদি গিয়ে থাকেন তো দেখতে পাবেন ।  সেই জল পরশ করে মাকে প্রণাম করলাম ও পুরোহিত পান্ডা আমাদের গলায় মায়ের পুজোর মালা পরিয়ে দিলেন এবং কপালে মায়ের সিঁদুর পরালেন খুব উৎফুল্ল লাগছিল মনটা, মা তুমি আবার দয়া করে এনো মা এই পার্থ না জানিয়ে দর্শন করে চলে এলাম মন্দিরের বাইরে ।  এবার খুব খিদেও পেয়েছে এমন সময় দেখি আমাদের পান্ডা এসে বললেন চলুন একটু জলযোগ করবেন আমার বাড়ি, বেশ ভালই হলো গেলাম আমরা তার বাড়িতে বেশ গরম গরম ফুনকো লুচি আর তার সহিত বেশ সুস্বাদু তরকারি সবজী আবার চারটে করে বড় মিষ্টি কিছু মনে করবেন না আমি বরাবরই খুব ভোজন রসিক প্রিয় মানে পেটুক মশাই সেবা খুব ভালো হলো পরে পান্ডা মহাশয় কে প্রোনামী দিয়ে চলে এলাম। একেবারে চূড়ায় গাড়ি যায় না খুব ছোট ও দুর্গম পথ  হেঁটেই যেতে হয়, বেশ অনেক টা পথ আমি হাঁটছি তো হাঁটছি তারপর এলাম সেই শিব মন্দিরে । আর একজন মাত্র আমার সঙ্গী ছিল আর কাউকেই সেখানে দেখলাম না, খুব নির্জন স্থান এই চূড়া থেকে ব্রহ্ম পুত্র নদ কে যেনো একটা ছোটো খালের মতন দেখতে লাগছিল আর সব যেনো ঝুলনের পুতুল সাজানো মনে হচ্ছিল নদীর মাঝখানে আছেন উমানান্দ মহেশ্বর মহাদেব। দেখে মনে হলো বহু প্রাচীন সেই বট বৃক্ষ তার কত বয়স সেটা কেউ জানেনা । বাবা কে ভক্তি ভোরে প্রণাম করে আমি নিচে নেমে এলাম, এই রকম আমাদের আসাম ভ্রমণ কাহিনী অনেক আছে কিন্তু লেখা বড় হয়ে যায় সেই সব একেবারে লেখা যায় না । পরে ভ্রমণ কাহিনী তে আমি আপনাদের আবার বলবো আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কথা, যেমন আসাম শিব সাগর ও বিরাট রাজার রাজ্য আর জাদুর দেশ আসামের মায়াং প্রমীলার রাজ্য, কৃষ্ণ চুড়া ফুল হাতে নিয়ে ব্রহ্ম পুত্র নদীতে স্বান করা এই সবের বিরাট কাহিনী আছে । আসামে বহু কিছু দেখার আছে  কিন্তু পাহাড় থেকে নিচে নামার সময় গাড়িতে দারুন ভালো লাগছিল । কুচবিহারের মহারাজা মা কামাখ্যার মন্দির নির্মাণ করে দেন, নিচ থেকে উঠার পথও আছে আমি সেই পথেও নেমেছি কিন্তু খুব মজা লাগে নামার সময়, আবার হেঁটে উঠার সময় খুব কষ্ট হয় সব সিড়ি করা আছে । পুরাকালে এক নরকা সুর নামক দৈত্য এক রাতে পাহাড় কেটে এই সিড়ি পথ করে দেয়, কিন্তু সম্পূর্ণ করতে পারে নাই । এটাই ছিল পাহাড় ভ্রমণের আমার প্রথম অভিজ্ঞতা, আপনাদের কেমন লাগছে তা কমেন্ট করে জানাবেন আর আমার সঙ্গে থাকবেন যেনো আমি আপনাদের এই ভাবে ভালো ভালো লেখা উপহার দিতে পারি । ধন্যবাদ সবাইকে !

       ক্রমশঃ~ 
শ্রী কৃষ্ণ দাস সঞ্জয় শাস্ত্রী, নবদ্বীপ ধাম !🙏

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

sanjaykumar goswam104@gmail.com

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রঘুনাথ দাস গোস্বামী

Ramayon Ki Mhima